একটা বাংলা ব্লগে কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের “কুদরত রঙ্গি-বিরঙ্গী” নিয়ে আলোচনা পড়ে তার লেখা পড়ে দেখার আগ্রহ জন্মালো। “কুদরত রঙ্গি-বিরঙ্গী” আন্তর্জালে খুঁজে পাওয়া গেল না, কিন্তু “মজলিস” পেলাম। লেখার ধরনটা বেশ উপভোগ্য। হালকা আড্ডার ছলে পাঠককে নিয়ে গেছেন অন্য এক জগতে, যে জগত সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারনা ছিল না। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বরাররই ভালো লাগলেও তার রকমফের নিয়ে কোনরকম জ্ঞানই আমার নেই। জানার আগ্রহ থাকা সত্বেও শোনার কান না থাকার দরুন বেশ কবার চেষ্টা করে বিফল ও হয়েছি। বইটা পড়তে গিয়ে হালকা একটা ধারনা পাওয়া গেল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গঠন সম্পর্কে। তার চেয়েও বেশী জানা গেল গাইয়ে আর বাজিয়েদের জীবন সমন্ধে। গল্পগুলোর কিছুর সরাসরি উৎস লেখক, কিন্তু অধিকাংশই তার কাছে এসে জমা হয়েছে এ-কান ও-কান ঘুরে। তাই গল্পের সত্যাসত্য বিচার করা দূরহ। তা সত্বেও গল্পগুলো শুনতে খারাপ লাগে না। আমজনতার জন্য এ যেন পর্দা ওঠার আগের আর পর্দা নামার পরের অন্দরমহলের আমন্ত্রন।
তবে আড্ডার ছলে বলা গল্পগুলো তেমন সরলরৈখিক নয়। প্রায় সময়েই গল্পগুলো ছুটে বেড়ায় এক স্থান-কাল থেকে আরেক স্থান-কালে। মাঝেমধ্যে এই লাফ-ঝাঁপ এতই বেশী যে পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। লেখক মাঝে মাঝে এতকিছু বলতে চান যে কোনোটাই ঠিকভাবে বলা হয়ে উঠে না। এই কারনে বইটার শুরুর দিকটা বেশ আগ্রহ-জাগানিয়া হলেও মাঝপথ থেকে বেশ ক্লান্তিকর হয়ে পড়ে। বইটা নিয়ে ঘাটতে গিয়ে জানলাম লেখকের মুল লক্ষ্য সাধারন পাঠক ছিলেন না, বরং ছিলেন “কুদরত রঙ্গি-বিরঙ্গী” এর সমালোচকের দল। যার কারনে কিছু কিছু জায়গায় লেখকের সুপ্ত আক্রোশ ও কলম দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
বইটা পড়ে সময় নষ্ট হয়েছে এই দাবী করা যাবে না। বেশ কিছু নতুন তথ্য জানা গেল বইটার সুবাদে। আশা করি সামনে “কুদরত রঙ্গি-বিরঙ্গী” পড়ার সুযোগ হবে। সেটা হলে লেখক কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে আরেকটু ভালো একটা মতামতে পৌছানো যাবে।
Published at: 10/03/2021