প্রথমবার বইটা পড়েছিলাম সতের বছর বয়সে। পড়ে কি মনে হয়েছিল তা বিশেষ মনে নেই, তবে অনভিজ্ঞ কিশোর মন যে খুব বেশী কিছু আহরণ করতে পারেনি তখন তা আন্দাজ করতে পারছি। এই বইটা দ্বিতীয়বার পড়া হল আরো প্রায় সতের বছর পর। পাঠকের মৃত্য়ু সম্পর্কে জানতাম, পড়তে গিয়ে মনে হল পাঠকের পুনর্জন্ম ঘটেছে। গুটিকয়েক বাক্য বাদে প্রথমবারের পড়ার স্মৃতি প্রায় কিছুই মনে ছিলনা। এই কবছরে চিন্তার ধারা বদলেছে অনেকটা আর হয়তো সেই কারনেই পড়তে গিয়ে বেশ উপভোগ করলাম উপন্যাসটা।
উপন্যাসটির পটভুমি স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতের দিল্লী শহর, ২য় মহাযুদ্ধের প্রায় শেষভাগ। লেখকের বর্ণনায় চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তবে লেখার মূল উপজীব্য দিল্লীর শিক্ষিত চাকুরীজীবি এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত সমাজের একটা অংশের জীবন। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন ক্ষমতা দিয়ে লেখক দেখেছেন এদের জীবন আর অসাধারন লেখনী দিয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন তার অভিজ্ঞতা। খুব সরল আড্ডার ঢং এ লেখক বলে গেছেন গল্পগুলি।ভাষার প্রাঞ্জলতা আর শব্দের ব্যবহার মুজতবা আলীর লেখনীকে মনে করিয়ে দেয়। বিলেতে কিছুকাল থাকার কারনে কাছ থেকে দেখেছেন ইংরেজ আর ইউরোপীয়ান সমাজকে। সেই সুবাদে নিজের মতামত দিয়েছেন কিভাবে দুশো বছরের ইংরেজ-সংস্পর্শ আমাদের সমাজকে বদলেছে তার সম্পর্কে। তার দু-একটা বক্তব্যের সাথে একমত হইনি তবে সবমিলিয়ে এটা ছিল বেশ সুখপাঠ্য একটা উপন্যাস।
Published at: 09/13/2021