পাঠ-প্রতিক্রিয়া - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ

এই বইটা নিয়ে লেখাটা অনেকদিন ধরে জমে আছে। তাই হয়তো বেশকিছু জিনিষ বাদ পড়ে যেতে পারে, টাটকা স্মৃতি থেকে লিখলে হয়তো সেটা হত না। যাই হোক, লেখা শুরু করছি।

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এর সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম আহমদ ছফার বই "যদ্যপি আমার গুরু"-তে। ওই বইটিতে সরদার ফজলুল করিম এর নেয়া সাক্ষাতকার সংকলন, তথা এই বইটির কথা জানতে পারি। এই বইটা ঠিক কখন কি মনে করে কিনেছিলাম ঠিক মনে পড়ছে না। বুদ্ধদেব বসুর "আত্মজৈবনিক" পড়তে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিককার ইতিহাস জানার আগ্রহ হল। কাকতালীয়ভাবে বইটা হাতের কাছে থাকায় পড়ে ফেলা গেল।

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের যেমন অসংখ্য বিমুগ্ধ অনুরাগী বিদ্যমান, তেমনি তার রাখ-ঢাকহীন বক্তব্যের জন্য তিনি অনেকের বিরাগভাজন ও বটে। এই বইটার মূল আকর্ষন তার এই রাখ-ঢাকহীন বক্তব্য। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে যে নিবিড় আন্তরিকতার বন্ধন দেখা যায় সেটা আজ সত্যিই অকল্পনীয়। শুরুর দিককার শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে জ্ঞানচর্চার যে আকাঙ্খা দেখা যেত সেটা কেন আজ হারিয়ে গেছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় যায়।

বাংলাদেশের অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমলাতন্ত্র বেশ ডালপালা মেলেই বেড়ে উঠেছে। বইটাতে পঞ্চাশের দশকের বেশ কয়েকটা ঘটনায় এই ভবিষ্যতের আভাস পাওয়া যায়।

বইটাতে উনবিংশ শতকের বাঙ্গালী বু্দ্ধিজীবি সমাজের একটা ছবি পাওয়া যায়। সাথে জানা যায় বিংশ শতকের শুরুর দিকের ঢাকার ইতিহাস। সরদার ফজলুল করিমের সাথে প্রাঞ্জল আলাপচারিতায় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বর্ণনা করে গেছেন তার চোখে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শহর এবং পূর্ববাংলা। তার সেই দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গীর মিল না ও থাকতে পারে। আলাপচারিতার বেশ কিছু জায়গায় অধ্যাপক রাজ্জাককে একগুয়ে এবং আত্মঅহংকারী বলে মনে হয় যদিও তা কতটুকু ঠিক বলতে পারছি না। তবে অধ্যাপক রাজ্জাককে নিয়ে যে মিথটা বিরাজমান, বইটা সেই মিথটাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

Published at: 06/27/2020